– এম সবুজ মাহমুদ
শৈশবে ঈদ আনন্দের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ছিল পছন্দের সাহিত্য সাময়িকী গুলোর ঈদসংখ্যা। প্রতিবছর এই ঈদসংখ্যা হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় মন উদগ্রীব থাকতো। কোনো কোনো বছর ঈদের প্রায় সপ্তাহখানেক আগেই সংগ্রহ করে নিতাম সম্পূর্ণ রঙিন প্রচ্ছদে ছাপা ঝকঝকে ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা গুলো। এরপর বড়জোর পাঁচ-ছয় দিনেই দম বন্ধ করে পড়ে ফেলতাম চুম্বক অংশগুলো।
তখনকার সময়ে স্মার্টফোন তো দূরের কথা মোবাইল ফোনে ক্যামেরাই ছিলনা। সুতরাং ছাপা কাগজপত্রের চাহিদা ছিল ব্যাপক। ঈদসংখ্যা ছাড়াও ঈদ কে কেন্দ্র করে পত্রিকার বিশেষ পাতাগুলো পড়ার নেশা ছিল মাদকের মতো। গ্রামের অদূরে বড় বাজারে প্রত্যেহ বিকেলে কয়েকঘন্টা পত্রিকা পড়ার নেশায় দুপুরের পরপরই চলে যেতাম বাই সাইকেলে চেপে। ঈদের সময়ে হাটবার গুলোয় উপচেপড়া ভীড় থাকতো। জমজমাট হইচইপূর্ণ পরিবেশেও মন লাগিয়ে পত্রিকার পাতায় ডুবে থাকতাম। ঠিক সন্ধ্যার আগে আগে চটজলদি কেনাকাটা করে বাড়ির পথে ফিরতাম। এভাবেই কেটে যেতো শৈশবে ঈদের পূর্বেকার সময় গুলো।
বাজারে পরম শ্রদ্ধেয় এক সাহিত্যানুরাগী ব্যবসায়ীর সাথে আমার তুমুল শখ্যতাও গড়ে ওঠেছিল এই পত্রিকা পড়াকে কেন্দ্র করেই। তাঁর সদুপদেশ জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে এখনো কাজে লাগে। তাঁর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ছিল আমার জীবনের এক অপ্রাতিষ্ঠানিক পাঠশালা।
এভাবে বই পড়ার নেশায় আরেকটি বিষয়ে আকৃষ্ট হয়েছিলাম ব্যাপকভাবে; আর তা হলো, পুরোনো বইয়ের দোকানে খুঁজে খুঁজে পুরোনো বই সংগ্রহ করে পড়া। সেসকল পুরোনো বইয়ের দোকানে অনেক ভালো ভালো বই পাওয়া যেতো। নাম মাত্র মূল্যে সেসব বই কিনে পড়ার মাঝে আলাদা একটা আনন্দ কাজ করতো। কারণ মফস্বল এলাকায় সবসময় সবধরনের বইয়ের নতুন কপি পাওয়া যেতো না।
এখন স্মার্টফোনের যুগ। সফটওয়্যারে লেখা পড়তে পড়তে ছাপার অক্ষর গুলো স্পর্শ করা তেমন একটা হয়ে ওঠেনা। তাছাড়া আগের মতো সাহিত্য সাময়িকী গুলোর ঈদসংখ্যাও আর সেভাবে বের হয়না। এখন স্মৃতি রোমন্থন করেই পুরোনো শখ-আহ্লাদ কে মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করে নিতে হয়।
লেখক:
প্রযোজনা সহকারী
বাংলাদেশ বেতার।
shobuzdxer57@gmail.com